কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ কেন?


আমাদের দেশে গত এক দশকে বহু সরকারি ও বেসরকারি কারিগরি কলেজ এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অনেকেই মনে করেন প্রতি বছর এ দেশে যে লক্ষ-লক্ষ তরুণ তরুণী চাকরীর বাজরে আসছে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে কেন?

যেখানে একজন জেনারেল শিক্ষার্থী মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ডোর টু ডোর কড়া নাড়ছে, সেখানে একজন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সফলভাসে কোর্স শেষ করার পর পরই কোথাও না কোথাও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। আর যদি কেউ না পারে বুঝতে হবে তার কাজ শেখার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।

অনেকে বিবিএ  এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে বসে আছে কিন্তু কোন কাজ জানা থাকলে বেকার বসে থাকতে হতো না। জেনারেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আছে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিন্তু সামাজিকভাবে পড়াশুনাকে মূল্যায়ন করা হয়না বলেই অনেক মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান বা মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে চায়না।

আমাদের দেশের প্রায় সবজায়গাতেই একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে যে যারা খারাপ ছাত্র, যারা গরীব যারা এতিম অসহায় তারাই শুধু কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে অন্যরা কেন? সকলেরই চিন্তা একজন ইলেক্ট্রিক টেকনিশিয়ানের সাথে একজন মাস্টার্স পাশ করা ছাত্র কি সমান হতে পারে? আমি একবার ছোট খাট এক টেকনিশিয়ানকে ১২০০০ টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাব দেই একটি স্বনামধন্য কোম্পানিতে, তাঁর অভিব্যক্তি ছিল ভাই এই টাকা দিয়ে আমার হাত খরচই হয় না। অথচ এই বেতনের জন্য হাজার হাজার বললে ভুল হবে লাখ লাখ চাকরী প্রার্থী প্রতি নিয়ত কোম্পানিতে সিভি জমা দিচ্ছে।

আমারা জেনারেল শিক্ষিতরা মনে করি কর্মচারিরা টেকনিক্যাল কাজ শিখবে আমরা তো অফিসার হবো আমরা তো কর্মচারি লেভেলে যেতে পারি না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের বুয়েট থেকে শুরু করে যতো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা বের হয় তাদের শিক্ষা কি কারিগরি শিক্ষা নয়। অনেকেই হয়তো বলতে পারেন তাঁরা তো ইঞ্জিনিয়ার বা অফিসার কিন্তু একজন বিএসসি  ইঞ্জিনিয়ার (ইলেক্ট্রিক), ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার (ইলেক্ট্রিক) ও ইলেক্ট্রিক টেকনিশিয়ানের মধ্যে পার্থক্য শুধু ডিগ্রীর কাজের কোন পার্থক্য নেই, হ্যাঁ কোনটা ছোট পর্যায়ের আবার কোনটা বড় পর্যায়ের কিন্তু কাজ তো একই।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এ ক্ষেত্রে আমরা কোন অবহেলা দেখতে পাই না কারণ স্কুল গুলোতে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত 'কর্ম-জীবনমুখী শিক্ষা' নামে একটি বই পড়ানো হয়। এবং দেশি বিদেশী অনেক দাতা সংস্থা এই বিষয়ে অনুদান দিয়ে থাকেন তার পরেও কেন আমরা কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিমূখ। অনেকেই গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, কারিগরি শিক্ষার প্রতি সমাজের অনেকেরই এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব আছে, কিন্তু কেন? সামাজিকভাবে ধরেই  নেয়া হয় যারা পড়াশুনায় ভালো নয় তারা টেকনিক্যাল এডুকেশনে আসবে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমন ধারণাটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এই সামাজিক দৃষ্ঠিভঙ্গি বদলানোর জন্য সামাজিক আন্দোলন করার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

আবার দেখা যায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কলেজগুলোতে মেয়েরা খুব একটা পড়তে চায় না যারা পড়ছেন, তাদের মধ্যে কেউ-কেউ বাধ্য হয়ে । একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, " কারিগরি শিক্ষায় আমার তেমন কোন ইচ্ছা ছিলনা। কিন্তু আমার আপু এখানে পড়ে তাই আমাকেও ভর্তি করানো হলো। সব মেয়েরা টেকনিক্যাল লাইনে পড়তে চায় না। অধিকাংশ মেয়েরা জেনারেল লাইনে পড়ে ডিগ্রি অর্জন করতে চায়। অবশেষে ফলাফল কারিগরি শিক্ষার প্রতি কর্মবিমুখতা।

অনেকটা গর্ব করে বলা যায় বাংলাদেশে অনেক কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছ যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, বিদেশের চাকরির বাজারের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করা। যারা বিদেশে কর্মী হিসেবে যেতে আগ্রহী তাদের অনেকেই ধরনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরাও আবার আদম ব্যপারীর খপ্পরে পড়ে নিজেদের পারিবারি সর্বস্ব খুইয়েছেন।

Comments

Popular posts from this blog

কেবি মডেল টেস্ট এর প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে........

১.১০. পিএইচপি প্রশিক্ষণ